শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

চমকের অপেক্ষায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতারা

রাজনীতি

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২১, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

চমকের অপেক্ষায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতারা

ছবি- ইন্টারনেট

একদিন পর শনিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় এ আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এই সম্মেলন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। তারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মেলনে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এবারের সম্মেলনে তারা ব্যতিক্রম কিছু আশা করছেন।

কারণ টানা ১৪ বছর ক্ষমতার মধ্যে থেকে দলের অনেকেই কর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। অনেকের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা বিতর্ক। এমন এক কঠিন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন, এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কী পরিবর্তন আসছে, সেই চমকের অপেক্ষায় সবাই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিকে সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৪২ বছর এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ঝড়ঝঞ্ঝা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে সংগঠিত করেছেন, ক্ষমতায় এনেছেন। শুধু দলই নয়, গোটা দেশ ও দেশের মানুষকে তিনি জানেন এবং বুঝেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাস-কী করলে দলের ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনিই সবচেয়ে ভালো নিতে পারবেন।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের হাল ধরে আছেন, ধরে থাকবেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা-চাওয়া তিনিই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এগিয়ে নেবেন। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যাকে দায়িত্ব দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেটাই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। নিশ্চয় নেত্রী তার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা দিয়ে ঠিক লোকটিই বেছে নেবেন এবং আমরা সবাই খুশি হব।

আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ যুগান্তরকে বলেন, একটা কমিটির মধ্যে সব সদস্য সমানভাবে কাজ করতে পারে না। যারা একটু নিষ্ক্রিয় বা দলীয় কর্মকাণ্ডে কম সক্রিয়, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সেক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন হয়। প্রতিটি সম্মেলনেই আগের কিছু বাদ পড়ে, কিছু সংযোজন হয়। নবীন ও পুরোনোর সংমিশ্রণে সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হয়। এটা সময় সময় হয়ে আসছে, এবারও হবে। কারণ এই দলের সভাপতি এই মুহূর্তে দেশের সবচেয় দক্ষ, বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নেত্রী।

এখন যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, প্রায় সবাই ওনার হাতে গড়া। ফলে তিনিই ভালো জানেন, তার কোন কর্মী কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। সেভাবেই তিনি তার দলকে ঢেলে সাজাবেন। আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেই মৌলিক নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়। গঠনতন্ত্রে সংশোধনী থাকলে সেটাও এখান থেকে অনুমোদন হয়। দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, অর্থনৈতিক পলিসি কী, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের ইশতাহারে কী যুক্ত করা প্রয়োজন, সেগুলোও কাউন্সিলে হয়। এই সম্মেলনের এক বছর পর নির্বাচন, ফলে সে বিষয়গুলোও আসবে। পাশাপাশি কাউন্সিলে পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত হয়, নতুন নেতৃত্ব আসে।

আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই এই দায়িত্ব দেন। সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জানেন, কাকে কোন দায়িত্ব দিতে হয়। তিনি এই সম্মেলনের মাধ্যমে যাদের হাতে দলের দায়িত্ব দেবেন, তারা আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশিত পথেই চলবেন, সে ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ যুগান্তরকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য এবার দলের এ সম্মেলন অনেক গুরুত্ব বহন করে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার অগণিত নেতাকর্মীর মনের ভাষা বোঝেন। এ কারণেই বরাবরের মতো এবারও তিনি নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করি। আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি তৃণমূল পর্যায়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। অতীতে যাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়, তারা অনেকেই দলকে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যক্তিস্বার্থে ভিন্নমতাবলম্বী ও আত্মীয়স্বজনকে সংগঠনে জায়গা করে দেওয়া এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়নে প্রদান ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসব নেতার বিরুদ্ধে।

তারা সংগঠনকে প্রশাসননির্ভর করেছেন। তাদের অত্যাচারে দূরে সরে গেছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কৌশলে হাইব্রিডদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতার প্রভাব খাটিয়ে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাকে খর্ব করার অভিযোগও রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনার একক যোগ্যতায় দল ও সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এসব নিয়ম-অনিয়মের সব তথ্যই তার কাছে আছে। তাকে আরও সফল করতে, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আনতে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। এবারের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যে সভাপতি পদে নতুন করে দায়িত্ব পাবেন, এ ব্যাপারে দলে বা দলের বাইরে কারও মনেই কোনো সন্দেহ-সংশয় নেই। এই মুহূর্তে তার কোনো বিকল্প নেই-এমনটাই মনে করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। তাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের কথা কারও বিবেচনাতেও নেই। তাই ২২তম সম্মেলনেও সব কাউন্সিলর তাকেই যে টানা দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত করবেন, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সভাপতি পদের বিকল্প না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনের মতো এবারও মূল আলোচনা সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করতে কে এই পদে আসবেন, তা দেখার অপেক্ষায় ঐতিহ্যবাহী দলটির নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান ওবায়দুল কাদের। ২১তম কাউন্সিলে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। ২২তম সম্মেলনে তিনি এলে তা হবে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ওবায়দুল কাদেরের হ্যাট্ট্রিক। কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করছে শেখ হাসিনার ওপর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ওবায়দুল কাদের আবারও হতে যাচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

অন্যদিকে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নামও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা দলীয় সভাপতিকেই সর্বসম্মতিক্রমে দায়িত্ব দেন সাধারণ সম্পাদকসহ দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের। ফলে সবাই তাকিয়ে আছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এদিকে আওয়ামী লীগের আগের কয়েকটি জাতীয় সম্মেলনের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসছেন কি না, এ নিয়ে নেতাকর্মীদের কৌতূহলের শেষ নেই।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির সভায় বেশ কয়েকজন নেতা প্রসঙ্গটি আনেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সবাই বড় হয়েছে। রাজনীতিতে আসবে কি আসবে না, সেটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যদি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়, হতে পারে। এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।

এনসি/

সর্বশেষ