বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

অতীত ভুলের কারণে বেকায়দায় জার্মানির শিল্পজগত

সারাবিশ্ব

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩০, ৯ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

অতীত ভুলের কারণে বেকায়দায় জার্মানির শিল্পজগত

ছবি- ইন্টারনেট

সংকটে পড়লে মানুষ অনেক সময়ে আলস্য ঝেড়ে ফেলে অতীতের ভুল সংশোধন করে অগ্রসর হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় জার্মান শিল্প-বাণিজ্য জগতও জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কাটিয়ে নতুন পথ খুঁজছে৷

দেশটির অনেক রাসায়নিক কোম্পানি যেন ছোটখাটো শহরের মতো৷ সেখানে কোটি কোটি কিলোওয়াট আওয়ার পরিমাণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়৷ জার্মানির অর্থনীতি জগতে জ্বালানির চাহিদা বিশাল হলেও এর আগে জোগান কখনো এত কমে যায়নি৷

রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ইস্পাত কারখানা, ভারি শিল্প, যন্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে৷ জার্মানির শিল্পজগতের জ্বালানির এমন বিশাল খিদে মেটানো এমনিতেই কঠিন৷ তার উপর গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে রাসায়নিক শিল্পক্ষেত্র বড় সংকটের মুখে পড়েছে৷ কেন্দ্রীয় রাসায়নিক শিল্প সংগঠনের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইয়োর্গ রোটারমেল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য কখনো বিশাল দর হাঁকা হচ্ছে৷ ডিটারজেন্ট থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, আঠা ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের এই বাড়তি বিশাল ব্যয় ক্রেতার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না৷

এ সবই রাসায়নিক উৎপাদনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়৷ কমপক্ষে আগামী বছর থেকে সব রাসায়নিক পণ্যের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা দেখা যাবে৷ বিএএসএফ নামের রাসায়নিক কোম্পানির চাহিদা মেটাতে প্রায় অর্ধেক গ্যাস এতকাল রাশিয়া থেকে আসতো৷ ১৯৯০-এর দশকের শুরুতেই সেই কোম্পানি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা গাজপ্রমের সঙ্গে মিলে লুডভিগ্সহাফেনে কোম্পানির সদর দপ্তর পর্যন্ত একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করেছিল৷

পোল্যান্ডের উপর দিয়ে জার্মানি পর্যন্ত ইয়ামাল পাইপলাইনে আর্থিক বিনিয়োগ করেছিল সেই কোম্পানি৷ ২০০৮ সাল থেকে বিএএসএফ ‘নর্ড স্ট্রিম ১' পাইপলাইন নির্মাণের কাজেও অংশ নিয়েছে৷ ফলে বেশ সস্তায় রাশিয়া থেকে গ্যাস আনা সম্ভব হয়েছে৷ জার্মান অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট মার্সেল ফ্রাচার মনে করেন, ক্রিমিয়া দখলের পরেও রাশিয়ার উপর নির্ভরতা বাড়ানো প্রথম ভুল৷ দ্বিতীয় ভুল হলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঢিলেমি৷ দশ বছর ধরে দক্ষতাসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও জার্মানি সেই পথে অগ্রসর হয়নি৷

এখন তার কুফল দেখা যাচ্ছে৷ অর্থাৎ জার্মানিতে আমাদের ভুলই এমন গভীর সংকট এবং অর্থনৈতিক কাঠামো বিপন্ন করে তোলার কারণ৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বিদ্যুতের উচ্চ মূল্যের কারণে জার্মানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও গ্যাস ব্যবহার করা হয়৷ প্রতি কিলোওয়াট আওয়ারের জন্য প্রায় ৩২ সেন্ট মাসুল দিতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে আন্তর্জাতিক স্তরে একই পরিমাণ গ্যাসের গড় মূল্য ১২ সেন্ট৷ মাঝারি মাপের রপ্তানি-নির্ভর কোম্পানিগুলির জন্য জ্বালানির উচ্চ মূল্য বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে৷ অথচ এমন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়েই জার্মানি অতীতে সব সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে৷ দেশ হিসেবে জার্মানি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার বিপুল ফায়দা তুলেছে৷ কিন্তু সস্তার জ্বালানি ছাড়া বিশ্ব বাজারে জার্মানিতে তৈরি পণ্য অতিরিক্ত দামী হয়ে উঠছে৷ এমন সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কী? আইএনজি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন ব্রজেস্কি বলেন, জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ত্যাগ করে বিকল্প জ্বালানি গ্রহণের প্রক্রিয়া অবশ্যই বর্তমান সংকট থেকে মুক্তি পাবার ও ইতিবাচক কিছু করে দেখানোর বিশাল সুযোগ৷

শিল্পভিত্তিক দেশ, ইঞ্জিনিয়ারদের দেশ হিসেবে আবার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ফিরে পেতে সেই প্রক্রিয়া আমাদের সাহায্য করতে পারবে এবং অবশ্যই করবে৷ টেকসই পদ্ধতি ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি অত্যন্ত জরুরি৷ ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানির কোম্পানিগুলিকে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে৷ নতুন প্রযুক্তি ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিনিয়োগের পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নতির কাজে মদত দিতে হবে৷ রাষ্ট্রের তরফ থেকেও জ্বালানির নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ করতে হবে৷

এনসি/

সর্বশেষ